Header Ads

হার না মানা গল্প

           

   
            সোহাগ হাওলাদারের হার না মানা গল্প


সোহাগ হাওলাদার একজন ভবিষ্যৎ ডাক্তার । ইতিমধ্যে আপনারা অনেকে হয়তো বা তাকে চিনেন ।হাজার সীমাবদ্ধতাকে দূর করে অনুপ্রেরণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি ।পড়ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ফাইনাল ইয়ারে । সোহাগ হাওলাদারের সংগ্রামের গল্প শুনুন জীবনের সাথে কতটা সংগ্রাম করে তিনি এ পর্যায়ে আজ এসেছেন ।ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সৌভাগ্য হবে কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি এখন ভাবতে অবাক লাগে যে ,তার কাছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভর্তি হবার ফরম কেনার টাকা পর্যন্ত ছিলনা ।এমন দারিদ্রতা তাকে পার করতে হয়েছে । দারিদ্রের সাথে লড়াই করে কেটেছে শৈশব । বাবার সাথে খেতে কাজ করা ,রাতে মাছ ধরা ছিল আমার দৈনিন্দন কাজ । আট- দশটা ছেলের মত বিকেলে খেলাধুলা করার সময় হয়নি কখনো তার ।কিভাবে দুই বেলা খাবার জোগাড় করবে তাই ছিল তা লক্ষ্য । তবুও মনের মধ্যে এটা  কাজ করত যে ,পড়াশোনা আমাকে করতেই হবে  বড আমাকে হতেই হবে । তাই সারাদিনের চূড়ান্ত পরিশ্রমের পর রাতে হারিকেনের আলোয় যখন পড়তে বসতাম তখন ক্লান্ত শরীর শায়না দিলেও অনেক জোর করে পড়তে বসতাম। অভাব-অনটনের যেখানে দুইবেলা ভাতের যোগাড় হয় না কিন্তু সেখানে পড়াশুনা বিলাসিতা ।আমি তখন ক্লাস ফোরে পড়ি ।ফেব্রুয়ারি মাসে তখন মা মারা যান হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ।টাকা পয়সার অভাবে তার উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেনি তার মা রোগে মারা গিয়েছিল তখন জানতে পারেনি ।মেডিকেলে পরে এখন বুঝতে পারছি মা স্ট্রোক করে মারা গিয়েছিল। মাছ মারা গেলে কিন্তু রেখে গেলেন 5 দিন বয়সের বোনকে। তাছাড়া আমার তখন চার-চারটে ভাই বোন । আমি বড় তারপর দুই বোন তারপর  ছোট ভাই ।আমাদের জীবন ধারণ যেখানে  কষ্টের  সেখানেও ওকে লালন-পালন করা আমাদের অনেক দুঃসাধ্যের ।তাই তোকে একজন নিঃসন্তান দম্পতি নিয়ে গেল এই শর্তে  যে ,তাকে কোনদিন বোন বলে পরিচয় দিতে পারব না । মা মারা যাবার ছয় মাস পরে আবার বাবা বিয়ে করলেন । আমার অন্য এক বোনকে এক বড় লোক খালা তাকে নিয়ে গেলেন ,কাজের মেয়ের মতো ব্যবহার করতেন একসাথে খেতে দিতেন না রান্নাঘরে রান্নাঘরে থাকতে দিত । আমি ক্লাস ফোর এর বাষিক পরীক্ষা দিয়ে সবার সিদ্ধান্তে পড়াশোনা বন্ধ করে নারায়ণগঞ্জে ওয়ার্কশপে কাজ করতে যায় যাতে বাবাকে আর্থিক সাহায্য করতে পারি ।ওয়ার্কশপে সকাল 8 টা হতে রাত দুইটা পর্যন্ত কাজ করতে হতো ।আমার সামনে দিয়ে আমার বয়সী ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেত তাদের দেখে আমার চোখে পানি চলে আসলো।ছয় মাস পরে আমি বাড়িতে বেড়াতে আসে workshop এ ফিরে যাওয়ার আগের দিন আমার এক বন্ধু আমাকে স্কুল যাবার উৎসাহ দিয়ে নিয়ে গেল বন্ধুদের দেখে আমার আর তাদের সঙ্গ ছাড়ার ইচ্ছা হল না ।স্যার দের কাছ থেকে বই নিয়ে বাড়িতে যাই । বাড়িতে এসে যখন বললাম আমি আবার স্কুলে যাব পরিবারের সবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল ।আমার সৎ মা আর বাবা আমাকে বাড়িতে থাকতে দিল না । তাই নিরুপায় হয়ে পাশের এক বাসায় লজিং থাকতেম । তাদের দুই বাচ্চাকে পড়াতে হবে এবং আমার পড়াশোনার খরচ আমাকে নিজের চালাতে হবে ।আমি শুক্রবার জমিতে দিনমজুরের কাজ করতাম 20 টাকার বিনিময়ে যেখানে বড়রা পেত 50 টাকা ।শুক্রবার রাতে মাছ ধরতাম সারারাত নৌকা চালাতাম ।আর একজন মাছ ধরতো । এভাবে টাকা পেতাম তাই দিয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতাম । সবার মতামত উপেক্ষা করে ছয় মাস gave  দিয়ে ক্লাশ ফাইভে উঠলাম । বৃত্তি পরীক্ষার গাইড কেনার জন্য বাড়ির এক চাকুরিজীবী কাছ থেকে টাকা চেয়েছিলাম ।তার সেদিন হাসি এখনো আমার কানে ভাসে। যে সারাদিন মাঠে কাজ করে সে করবে পড়াশোনা । জেদ চেপে যায় মাথায় আরো বেশি করে পড়তাম। করে 50tk দিয়ে আমার এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পাঞ্জেরী গাইর্ড কিনলাম ।বেশি রাফ খাতা কেনার টাকা  ছিলনা না ।তাই পুরনো খাতার এমন কোন জায়গা নেই যেটা  তাকে রেখেছি। এক লেখার উপর আবার লিখেছি। এত কষ্টের পর যখন প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার  ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেলাম তখন স্যারদের সুনজরে আসি ।A+ পাওয়াটা ছিল আমার পড়াশোনার টার্নিং পয়েন্ট ।এরপর টিউশনি করে পড়াশোনা চালাই ।অষ্টম শ্রেণীতে সাধারন বৃদ্ধি পাই। এসএসসিতে জিপিএ 4.80 উপর এবং এইচএসসিতে 5 পয়েন্ট দিয়ে ঢাকায় আসি ।কোচিং করার সামর্থ ছিলনা পরে রুমের fan বিক্রি করে কোচিং টাকা পরিশোধ করি । অসহনীয় গরমে কিভাবে যে পড়াশোনা করেছি তা বলে বোঝাতে পারবো না ।ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাই প্রথমেই ।মেডিকেলে ফরম পূরণের  ঢাকা ছিলনা ।বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে আল্লাহর রহমতে 182 নাম্বারে মেডিকেলে চান্স পাই। এখন যে মানুষগুলো আমাকে  অপমান  করত তারাই আমাকে এখন অনেক গুরুত্ব দেয । গ্রামের কারো যেকোনো সমস্যায় আমার ডাক পড়ে। আমিও গ্রাম থেকে আসা ঢাকা মেডিকেলে রোগীদের সাধ্যমত চেষ্টা করি । মনে এক অন্যরকম প্রশান্তি আসে আমি যখন থার্ড ইয়ারে পরি তখন ওয়ার্কশপের মালিক ঢাকা মেডিকেল এ এসে আমাকে ফোন দিলেন আর আমি তাকে ডাক্তার দেখাই ।আল্লাহতালা আমাকে মানুষের সেবা করার যে সুযোগ দিয়েছেন  আমি যেন সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারি ।আমি কোনদিন আর্থিক স্বাধীনতা পাইনি তাই বলে কোথাও থেমে থাকেনি ।

কোন মন্তব্য নেই

Zemdega থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.